সকল শ্রেণীর, কোষ বিভাজন কী এবং কাকে বলে?

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আপনারা কি কোষ বিভাজন কি এবং কাকে বলে এ বিষয় নিয়ে সঠিক তথ্য খুজতেছেন। অনেক জায়গায় খুঁজেছেন কিন্তু কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তরগুলো এখনো জানতে পারেনি। চিন্তার কোন কারণ নেই এখানে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে কোষ বিভাজন কি এবং কাকে বলে।
কোষ-বিভাজন-কী-এবং-কাকে-বলে

প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর এই প্রশ্নের উত্তর গুলো জানতে হয়। আপনারা যে শ্রেণীর হোন না কেন? সকল শ্রেণীর প্রশ্নের উত্তর গুলো কিন্তু একই। আমাদের এই আর্টিকেলটির মধ্যে আপনি সকল শ্রেণীর কোষ বিভাজন সম্পর্কে এ টু জেড তথ্য পেয়ে যাবেন। আসুন আমরা মূল আলোচনার দিকে ফিরে যাই।

কোষ বিভাজন কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি

জীবজগতের প্রতিটি প্রাণীর দেহ গঠিত হয়েছে অসংখ্য ক্ষুদ্র একক দ্বারা, যাদের বলা হয় কোষ। কোষী জীবনের মৌলিক গঠন ও কার্যকর একক।

প্রতিটি কোশ্চেন নির্দিষ্ট আইন আছে। পুরনো বা মৃত কোষের স্থানে নতুন কোষ সৃষ্টি না হলে চিপ দেহ টিকে থাকতে পারতো না। এই নতুন কোষ তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াটি হলো কোষ বিভাজন।

কোষ বিভাজন কাকে বলে?

যখন একটি কোষ নিজের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমকে ভাগ করে দুই বা ততোধিক নতুন কোষ তৈরি করে, তখন সেই প্রক্রিয়াকে কোষ বিভাজন বলা হয়। সহজভাবে বলা যায়,একটি মাতৃকোষ বিভাজিত হয়ে দুটি বা একাধিক কন্যাকোষের জন্ম দেয়।

এই বিভাজনের ফলে জীবের বৃদ্ধি, টিস্যুর পুনর্গঠন, ও প্রজনন সম্ভব হয়। কোষ বিভাজন শুধুমাত্র জীবের বংশবিস্তারেই নয়, বরং শরীরের ক্ষত সারানোর, নতুন টিস্যু গঠন ও দেহের বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোষ বিভাজনের মাধ্যমে জীবদেহ তার জেনেটিক তথ্য পরবর্তী প্রজন্মে হস্তান্তর করতে পারে।

কোষ বিভাজনের প্রকারভেদ

কোষ বিভাজন মূলত দুই প্রকার হয়ে থাকে,
  • মাইটোসিস ( mitosis )
  • মিয়োসিস ( Meiosis )
এছাড়া কিছু এককোষী জীবের ক্ষেত্রে সরল বিভাজনের আরেকটি রূপ দেখা যায়, যাকে অ্যামিটোটিক বা সরল বিভাজন (Amitosis) বলা হয়। নিচে প্রতিটি প্রকার আলাদা করে আলোচনা করা হলো।

মাইটোসিস বিভাজন (Mitosis Division)

সংজ্ঞাঃযে বিভাজনে একটি মাতৃকোষ সমান জেনেটিক গঠনযুক্ত দুটি কন্যাকোষ তৈরি করে, তাকে মাইটোসিস বিভাজন বলে।

স্থানঃএটি সাধারণত দেহকোষ বা সোমাটিক কোষে ঘটে। যেমন,ত্বক, হাড়, পেশি ইত্যাদি কোষে।
মাইটোসিস বিভাজন চারটি মূল ধাপে সম্পন্ন হয়,

  1. প্রোফেজ (Prophase): ক্রোমোজোমগুলো ঘন হয়ে দৃশ্যমান হয়, নিউক্লিয়াসের পর্দা ভেঙে যায়।
  2. মেটাফেজ (Metaphase): ক্রোমোজোমগুলো কোষের মধ্যরেখায় সারিবদ্ধভাবে অবস্থান নেয়।
  3. অ্যানাফেজ (Anaphase): প্রতিটি ক্রোমোজোমের জোড়া আলাদা হয়ে বিপরীত মেরুর দিকে সরে যায়।
  4. টেলোফেজ (Telophase): নতুন দুটি নিউক্লিয়াস তৈরি হয় এবং কোষদেহ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি কন্যাকোষের জন্ম

মিয়োসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে?

মিয়োসিস কোষ বিভাজন হলো এমন এক বিশেষ ধরনের কোষ বিভাজন, যেখানে একটি মাতৃকোষ থেকে চারটি কন্যাকোষ তৈরি হয় এবং প্রতিটি কন্যাকোষে মাতৃকোষের অর্ধেক সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে। অন্যভাবে বলা যায়,

মিয়োসিস হলো রিডাকশন ডিভিশন (Reduction Division), কারণ এতে ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে।

মিয়োসিস কোথায় ঘটে?

এই বিভাজন সাধারণত প্রজনন কোষে (Reproductive cells) ঘটে।

প্রাণীতে এটি অণ্ডাণু ও শুক্রাণু তৈরির সময় দেখা যায়।

উদ্ভিদে এটি ঘটে স্পোর বা গ্যামেট তৈরির সময়।

অর্থাৎ, মিয়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে জীবদেহ বংশবিস্তারের জন্য প্রয়োজনীয় হ্যাপ্লয়েড (n) কোষ তৈরি করে। যখন দুটি হ্যাপ্লয়েড কোষ মিলিত হয়, তখন আবার একটি পূর্ণাঙ্গ ডিপ্লয়েড (2n) জাইগোট তৈরি হয়, যার মাধ্যমে নতুন প্রাণীর সৃষ্টি হয়।

মিয়োসিস বিভাজনের ধাপ

মিয়োসিস মূলত দুটি পর্বে সম্পন্ন হয়,যেমনঃ
  • মিয়োসিস-I (Reduction Division)
  • মিয়োসিস-II (Equational Division)
প্রতিটি পর্বের মধ্যেই মাইটোসিসের মতো ধাপ থাকে,প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ।

১. মিয়োসিস - I (প্রথম বিভাজন)

এই পর্বে ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে।

প্রোফেজ - I: মাতৃ ও পিতৃ ক্রোমোজোম জোড়া বাঁধে (Synapsis), এবং জেনেটিক উপাদানের বিনিময় ঘটে (Crossing Over)। এর মাধ্যমে জিনগত বৈচিত্র্য তৈরি হয়।

মেটাফেজ - I: ক্রোমোজোম জোড়াগুলো কোষের মধ্যরেখায় সারিবদ্ধভাবে থাকে।

অ্যানাফেজ - I: প্রতিটি জোড়া আলাদা হয়ে বিপরীত মেরুর দিকে সরে যায়।

টেলোফেজ - I: কোষদেহ বিভক্ত হয়ে দুটি কন্যাকোষ সৃষ্টি হয়, যেখানে ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেক হয়ে যায়।

২. মিয়োসিস - II (দ্বিতীয় বিভাজন)

এই পর্বটি অনেকটা মাইটোসিসের মতো, তবে এখানে ক্রোমোজোম সংখ্যা আর কমে না।

প্রতিটি কোষ আবার চারটি ধাপে বিভাজিত হয়ে চারটি হ্যাপ্লয়েড কন্যাকোষ তৈরি করে।

ফলস্বরূপ, এক মাতৃকোষ থেকে চারটি জিনগতভাবে ভিন্ন কন্যাকোষ তৈরি হয়।

মিয়োসিস বিভাজনের গুরুত্ব

বংশবিস্তারঃ যৌন প্রজননের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যামেট তৈরি করে।

জেনেটিক বৈচিত্র্যঃ ক্রসিং ওভার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন জিনগত বৈচিত্র্য তৈরি হয়, যা জীববৈচিত্র্য বাড়ায়।

ক্রোমোজোম সংখ্যা স্থিতিঃ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ক্রোমোজোম সংখ্যা একই রাখে।

এক কথায় বলতে গেলে,মিয়োসিস কোষ বিভাজন হলো এমন একটি জৈব প্রক্রিয়া, যেখানে একটি ডিপ্লয়েড মাতৃকোষ বিভাজিত হয়ে চারটি হ্যাপ্লয়েড কন্যাকোষে পরিণত হয়, এবং এর মাধ্যমে জীবদেহে যৌন প্রজনন ও জিনগত বৈচিত্র্য বজায় থাকে।

অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে

অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন হলো কোষ বিভাজনের সবচেয়ে সরল ও প্রাচীন ধরণ, যেখানে কোষের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম সরাসরি ভাগ হয়ে যায়, কোনোরকম ক্রোমোজোম গঠন, স্পিন্ডল ফাইবার তৈরি বা ধাপভিত্তিক পরিবর্তন ছাড়াই। সহজভাবে বলা যায়,

“যখন একটি কোষ কোনো জটিল ধাপ অনুসরণ না করে, সরাসরি দুইটি অংশে বিভক্ত হয়, তখন সেই প্রক্রিয়াকে অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন বলে।”

এই বিভাজনকে ইংরেজিতে বলা হয় Amitosis বা Direct Cell Division। এটি সাধারণত খুবই সহজ এবং সময়সাপেক্ষ নয়।

অ্যামাইটোসিস কোথায় দেখা যায়

অ্যামাইটোসিস বিভাজন সাধারণত নিম্নস্তরের জীবের বা বিশেষ অবস্থার কোষে দেখা যায়।

উদাহরণস্বরূপঃ

এককোষী জীব যেমন ব্যাকটেরিয়া, অ্যামিবা, প্যারামেশিয়াম প্রভৃতিতে।
কিছু বৃদ্ধ কোষে বা রোগাক্রান্ত টিস্যুতে।

প্রাণীর লিভারের কোষ, কার্টিলেজ কোষ বা অস্থি মজ্জার কোষে কখনো কখনো এই বিভাজন দেখা যায়।
কিছু উদ্ভিদ কোষেও বিশেষ অবস্থায় অ্যামাইটোসিস ঘটে।

অর্থাৎ, এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত সেইসব কোষে দেখা যায় যেগুলোতে জটিল নিউক্লিয়ার গঠন নেই বা অতি দ্রুত নতুন কোষের প্রয়োজন হয়।

অ্যামাইটোসিস বিভাজনের ধাপসমূহ

অ্যামাইটোসিস বিভাজন খুব সরল এবং সাধারণত দুইটি ধাপে সম্পন্ন হয়,

  • নিউক্লিয়াসের বিভাজন
  • সাইটোপ্লাজমের বিভাজন

১. নিউক্লিয়াসের বিভাজন

প্রথমে কোষের নিউক্লিয়াসের মধ্যে একটি সংকোচন বা constriction দেখা যায়।

ধীরে ধীরে নিউক্লিয়াস দুটি সমান অংশে বিভক্ত হয়ে যায়।

এই বিভাজনের সময় ক্রোমোজোম আলাদা হয়ে দৃশ্যমান হয় না।

২. সাইটোপ্লাজমের বিভাজন

নিউক্লিয়াস বিভাজনের পর সাইটোপ্লাজমে একইভাবে একটি সংকোচন শুরু হয় এবং কোষদেহ ধীরে ধীরে দুটি আলাদা কোষে পরিণত হয়।

ফলাফল হিসেবে দুটি কন্যাকোষ তৈরি হয়, যেগুলোর জেনেটিক গঠন প্রায় মাতৃকোষের মতোই থাকে।

অ্যামাইটোসিস বিভাজনের বৈশিষ্ট্য

  • এটি সরাসরি বিভাজন (Direct Division), কোনো জটিল ধাপ নেই।
  • স্পিন্ডল ফাইবার, ক্রোমোজোম দৃশ্যমানতা, বা প্রোফেজ-মেটাফেজ ইত্যাদি ধাপ অনুপস্থিত।
  • বিভাজনের ফলে গঠিত দুটি কোষ সাধারণত সমান আকারের নয়।
  • কোষে জেনেটিক উপাদান অনেক সময় সমানভাবে বণ্টিত হয় না, যার ফলে কিছু কন্যাকোষ দুর্বল হতে পারে।
  • এটি সাধারণত দ্রুতগতির বিভাজন, সময় লাগে খুব কম।

অ্যামাইটোসিস বিভাজনের উদাহরণ

অ্যামিবা তার কোষ বিভাজনের মাধ্যমে নতুন কোষ তৈরি করে।

কিছু ব্যাকটেরিয়া দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি করতে অ্যামাইটোসিস ব্যবহার করে।

প্রাণীর হেপাটিক (লিভার) কোষ, কার্টিলেজ কোষ ইত্যাদি কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এই বিভাজনের মাধ্যমে সংখ্যাবৃদ্ধি করে।

অ্যামাইটোসিসের গুরুত্ব ও ভূমিকা

দ্রুত কোষ উৎপাদনঃঅ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়া খুব দ্রুত হয়, তাই এটি জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত কোষ বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে।

সহজ প্রজনন প্রক্রিয়াঃএককোষী জীবের বেঁচে থাকার অন্যতম প্রধান উপায় এটি। কোনো জটিলতা ছাড়াই তারা বিভাজনের মাধ্যমে নিজেদের সংখ্যা বাড়াতে পারে।

ক্ষত সারানোঃকিছু ক্ষেত্রে এটি ক্ষতস্থান দ্রুত সারাতে সাহায্য করে, কারণ নতুন কোষ দ্রুত তৈরি হয়।

শক্তি সাশ্রয়ঃযেহেতু এতে জটিল ধাপ নেই, তাই শক্তি খরচও অনেক কম হয়।

নিম্নস্তরের জীবের টিকে থাকাঃপ্রাথমিক পর্যায়ের জীব যেমন ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়া অ্যামাইটোসিসের মাধ্যমেই প্রজন্ম বৃদ্ধি করে টিকে থাকে।

অ্যামাইটোসিসের সীমাবদ্ধতা

যদিও অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজ, কিন্তু এর কিছু অসুবিধাও আছে,জেনেটিক উপাদান সমানভাবে বণ্টিত না হওয়ায় কিছু কন্যাকোষ দুর্বল বা বিকল হতে পারে।এতে জিনগত বৈচিত্র্য (Genetic Variation) তৈরি হয় না,

ফলে প্রজাতির উন্নয়ন ধীরগতির হয়।উচ্চস্তরের প্রাণীর জন্য এই বিভাজন যথেষ্ট কার্যকর নয়।আমরা বলতেই পারি যে,অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন হলো এক প্রকার সরল ও প্রত্যক্ষ বিভাজন প্রক্রিয়া,

যেখানে কোষের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম কোনো জটিল ধাপ ছাড়াই সরাসরি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি নতুন কন্যাকোষ তৈরি করে।এই প্রক্রিয়া এককোষী জীব, নিম্নস্তরের প্রাণী ও কিছু বিশেষ টিস্যু কোষে দেখা যায়, যা দ্রুত বৃদ্ধি ও কোষ পুনর্গঠনে সহায়তা করে।

প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন কাকে বলে?

প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন হলো এমন এক ধরনের সরল কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া, যেখানে কোষের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম কোনো জটিল ধাপ ছাড়াই সরাসরি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি নতুন কোষ সৃষ্টি করে।

একে ইংরেজিতে বলা হয় Amitosis বা Direct Cell Division।এই বিভাজনে ক্রোমোজোম দৃশ্যমান হয় না, স্পিন্ডল ফাইবার তৈরি হয় না এবং প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ বা টেলোফেজের মতো কোনো নির্দিষ্ট ধাপও থাকে না। প্রথমে কোষের নিউক্লিয়াসে একটি সূক্ষ্ম সংকোচন তৈরি হয়, যা ধীরে ধীরে গভীর হয়ে নিউক্লিয়াসকে দুই ভাগে বিভক্ত করে।

পরে সাইটোপ্লাজমও ভাগ হয়ে দুটি পৃথক কন্যাকোষ গঠন করে।প্রত্যক্ষ বিভাজন সাধারণত এককোষী প্রাণী যেমন অ্যামিবা, ব্যাকটেরিয়া ও প্যারামেশিয়াম ইত্যাদিতে দেখা যায়। এছাড়া কিছু বৃদ্ধ বা ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু কোষেও এটি ঘটতে পারে।

এই বিভাজনের মূল বৈশিষ্ট্য হলোঃএটি দ্রুত, সহজ ও শক্তি-সাশ্রয়ী, তবে এতে জিনগত বৈচিত্র্য তৈরি হয় না। তাই এটি মূলত নিম্নস্তরের জীব বা বিশেষ অবস্থার কোষে দেখা যায়।

অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন কাকে বলে

অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন হলো এমন এক ধরনের অস্বাভাবিক জৈব প্রক্রিয়া, যেখানে কোষ নিজের বৃদ্ধি ও বিভাজনের স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অতিরিক্তভাবে বিভাজিত হতে থাকে। অর্থাৎ, যখন কোনো কোষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত বারবার বিভাজিত হয় এবং দেহের নির্দেশনা বা নিয়ন্ত্রণ মানে না,

তখন তাকে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন বলা হয়।স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষ নির্দিষ্ট নিয়মে বিভাজিত হয়,যখন নতুন কোষের প্রয়োজন হয় তখনই তা ঘটে। কিন্তু কখনো কখনো জিনের পরিবর্তন,

রাসায়নিক পদার্থের প্রভাব, রেডিয়েশন বা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে কোষের বিভাজন প্রক্রিয়ায় গণ্ডগোল দেখা দেয়। তখন কোষের “স্টপ সিগন্যাল” কাজ করে না, এবং কোষ ক্রমাগত নতুন কোষ তৈরি করতে থাকে।

অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনের ফলাফল

এই অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি কোষের একটি গুচ্ছ বা অতিরিক্ত টিস্যু (tumor) তৈরি করে, যা পরবর্তীতে ক্যানসার হিসেবে পরিচিত হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই কোষগুলো দেহের নির্দিষ্ট অংশে সীমাবদ্ধ থাকে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়ে এবং দেহের স্বাভাবিক কোষগুলোর কাজ ব্যাহত করে।

অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের ফলে,
  1. দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয়।
  2. পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হয়।
  3. কোষের জিনগত গঠন (DNA) নষ্ট হয়।
  4. শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়

অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন কাকে বলে

অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন হলো এমন এক ধরনের জৈব প্রক্রিয়া, যেখানে কোষের বৃদ্ধি ও বিভাজন স্বাভাবিক নিয়ম থেকে বিচ্যুত হয়। অর্থাৎ, কোষ যখন শরীরের নিয়ন্ত্রণ অনুযায়ী সঠিক সময়ে বিভাজিত না হয়ে অনিয়মিতভাবে বা অস্বাভাবিক গতিতে বিভাজিত হতে থাকে, তখন সেই প্রক্রিয়াকে অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন বলা হয়।সাধারণভাবে,
কোষ-বিভাজন-কী-এবং-কাকে-বলে

আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষ নির্দিষ্ট একটি জীবনচক্র অনুসরণ করে,তারা বৃদ্ধি পায়, নির্দিষ্ট সংখ্যকবার বিভাজিত হয়, তারপর মৃত্যু ঘটে। কিন্তু যখন কোনো কারণে কোষের জিনগত বা নিয়ন্ত্রণমূলক প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়, তখন তারা এই নিয়ম মানে না এবং অস্বাভাবিকভাবে বিভাজন শুরু করে।

অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের কারণ

অস্বাভাবিক বিভাজনের পেছনে বিভিন্ন কারণ কাজ করে, যেমনঃ
  • জিন মিউটেশন (Gene Mutation)
  • DNA-র ক্ষতি বা পরিবর্তনের কারণে কোষের বিভাজন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
  • রেডিয়েশন ও রাসায়নিক পদার্থঃঅতিরিক্ত রশ্মি, দূষণ বা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ কোষের অভ্যন্তরীণ গঠন নষ্ট করে।
  • ভাইরাস বা জীবাণুর প্রভাবঃকিছু ভাইরাস (যেমন HPV, Hepatitis B) কোষের DNA পরিবর্তন করে অস্বাভাবিক বিভাজনের সূচনা করে।
জীবনযাপনের অনিয়মঃধূমপান, মদ্যপান, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও মানসিক চাপ দীর্ঘমেয়াদে কোষের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত করে।

অস্বাভাবিক বিভাজনের ফলাফল

অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের ফলে শরীরে অপ্রয়োজনীয় টিস্যু বা কোষগুচ্ছ (tumor) তৈরি হয়। এই টিউমার দুই ধরনের হতে পারে,

সৌম্য (Benign): যা নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ থাকে।

দূষিত বা মারাত্মক (Malignant): যা শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্যানসারে পরিণত হয়।
এছাড়া অস্বাভাবিক বিভাজন কোষের জিনগত গঠন নষ্ট করে দেয়, ফলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দুর্বল হতে থাকে।

যখন কোনো কোষ তার স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অনিয়মিতভাবে বিভাজিত হতে থাকে এবং দেহের টিস্যু ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত করে, তখন তাকে অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন বলা হয়।

এই প্রক্রিয়াই মূলত অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধির সূচনা করে, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারসহ নানা মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সুষম খাদ্য গ্রহণ ও পরিবেশের দূষণ থেকে দূরে থাকা কোষের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

সমীকরণিক কোষ বিভাজন কাকে বলে?

সমীকরণিক কোষ বিভাজন হলো এমন এক ধরনের বিভাজন প্রক্রিয়া, যেখানে একটি মাতৃকোষ বিভাজিত হয়ে দুটি কন্যাকোষ তৈরি করে, এবং প্রতিটি কন্যাকোষে মাতৃকোষের সমান সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে। অর্থাৎ, এই বিভাজনে ক্রোমোজোম সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকে। এজন্য একে Equational Division বলা হয়।

এই বিভাজনের মূল উদ্দেশ্য হলোঃ দেহের বৃদ্ধি, কোষ পুনর্গঠন ও ক্ষত সারানো। এটি সাধারণত প্রাণীর দেহকোষ (Somatic cell) বা উদ্ভিদের বৃদ্ধি অঞ্চলে ঘটে।

সমীকরণিক বিভাজনের ধাপসমূহ

সমীকরণিক বিভাজন মূলত মাইটোসিস (Mitosis) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এটি চারটি ধাপে ঘটে,
  1. প্রোফেজ (Prophase): ক্রোমোজোম ঘন হয়ে দৃশ্যমান হয়, নিউক্লিয়ার মেমব্রেন বিলীন হয়।
  2. মেটাফেজ (Metaphase): ক্রোমোজোমগুলো কোষের মধ্যরেখায় সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করে।
  3. অ্যানাফেজ (Anaphase): প্রতিটি ক্রোমোজোমের দুই অর্ধাংশ বিপরীত মেরুর দিকে সরে যায়।
  4. টেলোফেজ (Telophase): নতুন দুটি নিউক্লিয়াস তৈরি হয় এবং কোষদেহ দুই ভাগে বিভক্ত হয়।
ফলাফল হিসেবে দুটি জেনেটিকভাবে অভিন্ন কন্যাকোষ গঠিত হয়, যাদের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের সমান থাকে।

পরোক্ষ কোষ বিভাজন কাকে বলে?

পরোক্ষ কোষ বিভাজন হলো এমন একটি জটিল ও সুসংগঠিত প্রক্রিয়া, যেখানে কোষের বিভাজন একাধিক ধাপ অনুসরণ করে সম্পন্ন হয়। এতে কোষের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে দুইটি নতুন কন্যাকোষে বিভক্ত হয়।

এই বিভাজনে ক্রোমোজোম দৃশ্যমান হয়, স্পিন্ডল ফাইবার গঠিত হয় এবং বিভাজনের পুরো প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে ঘটে। এজন্য একে বলা হয় Indirect Cell Division বা Mitosis।

অর্থাৎ,
যখন একটি কোষ নিজের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমকে নির্দিষ্ট ধাপ অনুসারে বিভাজন করে দুটি সমান কন্যাকোষ তৈরি করে, তখন সেই প্রক্রিয়াকে পরোক্ষ কোষ বিভাজন বলে।

পরোক্ষ কোষ বিভাজন কোথায় ঘটে

এই বিভাজন সাধারণত দেহকোষ (Somatic cell) বা বৃদ্ধিশীল টিস্যু কোষে দেখা যায়।

প্রাণীদের ক্ষেত্রেঃ ত্বক, হাড়, রক্ত ও পেশি কোষে।

উদ্ভিদের ক্ষেত্রেঃ মূল, কান্ড ও পাতার বৃদ্ধি অঞ্চলে।

পরোক্ষ কোষ বিভাজন জীবদেহের বৃদ্ধি, ক্ষত সারানো এবং কোষ পুনর্গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরোক্ষ কোষ বিভাজনের ধাপসমূহ

পরোক্ষ কোষ বিভাজন সাধারণত চারটি প্রধান ধাপে সম্পন্ন হয়,
  • প্রোফেজ (Prophase)
  • মেটাফেজ (Metaphase)
  • অ্যানাফেজ (Anaphase)
  • টেলোফেজ (Telophase)

১. প্রোফেজ (Prophase)

এই ধাপে কোষ বিভাজনের প্রস্তুতি শুরু হয়। নিউক্লিয়াসের ভেতরের ক্রোমাটিন সুতা ঘন হয়ে স্পষ্ট ক্রোমোজোমে পরিণত হয়। প্রতিটি ক্রোমোজোম দুটি ক্রোমাটিড নিয়ে গঠিত থাকে,

যেগুলো সেন্ট্রোমিয়ার দ্বারা যুক্ত থাকে। নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যায় এবং কোষের দুই মেরুতে সেন্ট্রিওল স্থানান্তরিত হয়ে স্পিন্ডল ফাইবার তৈরি করে।

২. মেটাফেজ (Metaphase)

এই ধাপে ক্রোমোজোমগুলো স্পিন্ডল ফাইবারের সাহায্যে কোষের মধ্যরেখায় (equatorial plane) সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করে। প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার স্পিন্ডল ফাইবারের সঙ্গে যুক্ত হয়। এটি বিভাজনের সবচেয়ে স্থিতিশীল ও স্পষ্ট ধাপ।

৩. অ্যানাফেজ (Anaphase)

এই পর্যায়ে ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার বিভাজিত হয়ে যায় এবং প্রতিটি ক্রোমাটিড বিপরীত মেরুর দিকে টেনে নেওয়া হয়। ফলে কোষের দুই পাশে সমান সংখ্যক ক্রোমোজোম জমা হয়। এটি হলো জেনেটিক উপাদান সঠিকভাবে বণ্টনের ধাপ।

৪. টেলোফেজ (Telophase)

এটি বিভাজনের শেষ ধাপ। এখানে কোষের দুই মেরুতে নতুন দুটি নিউক্লিয়াস তৈরি হয়।ক্রোমোজোমগুলো আবার ক্রোমাটিন সুতায় রূপ নেয়, নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ও নিউক্লিওলাস পুনর্গঠিত হয়। অবশেষে কোষের সাইটোপ্লাজম বিভাজিত হয়ে দুটি কন্যাকোষ তৈরি হয়।

লেখক এর শেষ কথা

পাঠক, আমাদের এই আর্টিকেলে উপরে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে কোষ বিভাজন কি এবং কাকে বলে। এছাড়াও কোষ বিভাজনের মধ্যে যে সকল আলাদা আলাদা কোষ রয়েছে। সেগুলোর বিস্তারিত সঠিক তথ্যগুলো আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করেছি।

আশা করি কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তর গুলো জানতে পেরেছেন। এ ধরনের নিত্য নতুন আপডেট তথ্য যদি পেতে চান অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকবেন। উপকৃত হলে বন্ধু কিংবা আত্মীয়দের মধ্যে শেয়ার করতে কখনোই ভুলবেন না। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম এ এইচ টেক আইটির সকল নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়...

comment url